শুক্রবার, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:০০ পূর্বাহ্ন
॥মইনুল হক মৃধা॥ আসন্ন কোরবানীর ঈদকে সামনে রেখে হাটে, বাজারে, খামারে ও অনলাইনে কোরবানীর পশু বিক্রি শুরু হয়েছে। তবে কোরবানীর গরু কিনতে হাটের ভিড় ও ঝামেলা এড়াতে চাইছেন অনেকে। ক্রেতাদের এমন চিন্তার কথা ভেবে এবারও রাজবাড়ী সদর উপজেলার গৌরিপুরে পদ্মা এগ্রো ফার্ম লাইভ ওয়েটে গরু বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে।
এখানে ২শ কেজি থেকে শুরু করে ৬শ কেজি ওজনের অর্ধশত ষাড় গরু রয়েছে। পদ্মা এগ্রো ফার্ম গত বছর থেকে লাইভ ওয়েটে গরু বিক্রি শুরু করে। গত বছর শতভাগ সফলতার পর এবারও তারা ওই পদ্ধতিতে গরু বিক্রি করছে। এখনো কোরবানীর ঈদের বেশ কিছুদিন বাকি থাকলেও ইতিমধ্যে ক্রেতাদের আনাগনা শুরু হয়ে গেছে। লাইভ ওয়েটে ৫২৫ টাকা কেজি দরে গরু বিক্রি করছেন এই খামারি। একটি সাধারণ গরুর লাইভ ওয়েটের ৬০ শতাংশ মাংস পাওয়া যায় বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া হাড়, ভুঁড়ি, মাথার মাংস, যকৃৎ, ফুসফুসসহ বাড়তি আরও অংশ পাওয়া যায়।
খামারি এবং ক্রেতা উভয়ই বলছেন, ওজন পদ্ধতিতে কেজি দরে পশু ক্রয় করলে ঠকার সম্ভাবনা কম।
বিশেষ করে বেপারী ও খামারিরা ওজন ছাড়া যখন গরু ক্রয়-বিক্রয় করতেন তখন গরুর ওজন কত? কী পরিমাণ মাংস হবে? ইত্যাদি নানা প্রশ্ন উঠত এবং এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে যথেষ্ট বার্গেনিং চলত। এক পর্যায়ে হয়তো পশু বিক্রিই হতো না। কিন্তু এখন সে সমস্যা নেই। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পশু মাপার ওজন এসেছে। এখন ব্যাপারীরা ও ক্রেতারা লাইভ ওয়েটে ছোট-বড় গরু মেপে কিনে নিতে পারবেন। এতে ঠকার সম্ভাবনাও থাকে না।
গরু কিনতে আসা ক্রেতারা জানান, হাটে গরু কিনতে গেলে দালালসহ নানান রকমের মধ্যস্থ ভোগীদের ঝামেলায় পড়তে হয়। এ কারণে তারা নিরিবিলি পরিবেশে পছন্দমত গরুর সন্ধানে এই ফার্মে এসেছেন।
ফার্মে কর্মরত শ্রমিকরা জানান, এ ফার্মে পরিচ্ছন্ন পরিবেশে দেশীয় খাবারের মাধ্যমে গরু লালন পালন করা হয়। এখানে গরু মোটাতাজা করণের জন্য কোন ওষুধ প্রয়োগ করা হয় না।
ফরিদপুর থেকে গরু কিনতে আসা ক্রেতা মাহবুব হোসেন বলেন, গৌরিপুর একটি ফার্মে লাইভ ওজনে গরু বিক্রি হয় শুনে কোরবানীর জন্য একটি গরু দেখতে ও কিনতে এসেছি। এ ফার্মের সবগুলো গরুই অনেক মোটাতাজা ও সুন্দর। আমার একটি গরু পছন্দ হয়েছে, এটিই কিনে নিবো।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে হাট থেকে গরু কিনতে গেলে অনেক ঝামেলা ও ভোগান্তি পোহাতে হয়। তাছাড়া দালালরাও ঠকায়। এজন্য সরাসরি এসে ওজন দিয়ে কোরবানীর গরু কিনতে পেরে অনেক খুশি লাগছে।
পদ্মা এগ্রো ফার্মের স্বত্ত্বাধিকারী মনির হোসেন তালুকদার সুজন বলেন, গত বছরই আমরা প্রথম বডি ওয়েটে গরু বিক্রি শুরু করি এবং ফার্মের সব গরুই এ পদ্ধতিতে বিক্রি হয়ে যায়। গত বছর আমরা ৪২৫ টাকা কেজি দরে গরু বিক্রি করেছিলাম। তবে এবার উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় ৫২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি। ইতিমধ্যে কয়েকটি গরু বিক্রি হয়ে গেছে। আশাকরি কোরবানীর আগেই ফার্মের সকল গরু বিক্রি সম্পন্ন হয়ে যাবে।
রাজবাড়ী জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ ফজলুল হক সরদার বলেন, ‘ওজন দরে গরু বিক্রির ধারণাটি নতুন হলেও এটি বেশ চমৎকার ও গরু কেনার একটি ঝামেলাবিহীন পদ্ধতি। ক্রেতাদের সুবিধার্থে লাইভ ওয়েটে অনেকেই বিক্রি করছে। তবে এই পদ্ধতিতে যদি ক্রেতারা সন্তুষ্ট না থাকেন সরাসরি দেখেও কিনতে পারেন। এ পদ্ধতিতে ক্রেতাদের ঠকার সুযোগ থাকছে না। সাধারণত ১০০ কেজি ওজনের একটি গরু থেকে ৬০ কেজি মাংস পাওয়া যায়। বাকিটা নাড়িভুঁড়ি। তাই এটা মাথায় রেখেই মাপটা করতে হয়।
Leave a Reply